আলকাপ গান আমাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিজস্ব লোক সংস্কৃতি ও অতি জনপ্রিয় একটি লোক পালা গান। অনেক বছর পর আলকাপ গান শুনলাম দেখলাম। পুরনো স্মৃতি মোচড় দিয়ে উঠল। সত্যিই চমৎকার। চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মার তীরবর্তী গ্রাম জনপদে ভাদ্র আশ্বিন মাসে আলকাপ গানের আসর বসতো। ওই সময় মানুষের হাতে বিশেষ কাজ থাকত না। আমাদের গ্রামের উত্তরে পদ্মার একটি গভীর শাখা নালা ছিল। সেটার নাম ছিল কামারদহ। কালি কর্মকারসহ বেশ কয়েকঘর হিন্দু পরিবার ছিলেন কামারদহর পাড়ে। কালিদার বাড়িটা ছিল নদীর কোলঘেষে। কালিদার বাড়ির বাহিরের চওড়া বালুতটে বসতো আলকাপের আসর। দুই তিনটা দল আসত। তিনদিন ধরে পাল্লাপাল্লি আলকাপ গান হতো। একদল বিজয়ী হতো। আলকাপ গান হতো প্রতি বছর। জেগে উঠত পদ্মা বাহিত আশেপাশের সব গ্রাম জনপদ। যেন উৎসবের পরিবেশ। হাজার হাজার মানুষের ভিড় হতো। আমাদের এলাকাতেও ছিল দুই তিনটি আলকাপ গানের দল। আবার অন্য এলাকা থেকে দল ভাড়া করে আনা হতো। আলকাপ দলের প্রধানকে বলা হতো সরকার। প্রতিটা দলে এক দুইজন করে ছোকরা (পুরুষ যারা মেয়ে সেজে পাঠ করেন)। কমেডিয়ান বা জোকার থাকত এক দুইজন তাদেরকে কাঁইপ্প্যা বলা হতো। আসরে তারা মজার মজার বিষয় উপস্থাপন করে মানুষকে হাসাতেন। এসব এখন প্রায় বিস্মৃত হয়ে গেছে। আলকাপই হচ্ছে মাটি ও মানুষের লোক গান। প্রযুক্তি আর আধুনিকতার আগ্রাসনে এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আর কোথাও আলকাপ গানের দল নেই বলে শুনেছি। এই দলটি কোথাকার এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগের উপায় কেউ জানালে উপকৃত হবো।