Рет қаралды 12,286
বাবা বড় কাঁছারী মন্দির
#borokachari
#borokacharimandir
#bababorokacharitemple
#borokacharitemple
#bababorokachari
#borokacharihistory
#borokacharimandirroute
বড় কাঁছারীতে পূজা দিতে এসে শান্ত নিরিবিরি পরিবেশে স্বপরিবারে সারাদিন কাটানোর জন্য রূম লাগলে
বাবা বড় কাঁছারী যাত্রী নিবাস
আকাশ কাঁড়ার 8777471417
বড় কাঁছারী মন্দিরের অলৌকিক ইতিহাস :-
আমাদের পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে অনেক গ্রাম, আর সেই প্রত্যেক গ্রামে রয়েছে কিছু নিজস্ব দেবতা। এ রকমই একজন দেবতার কথা আমি আজকে বলব, যিনি শিবের একটি রূপ।
বড় কাঁছারী মন্দিরে আসতে চাইলে ধর্মতলা হইতে ঠাকুরপুকুর, একটা রাস্তা চলে গেছে বাখরাহাট রোডের দিকে। সেই রাস্তা দিয়ে চলে আসুন বাখরাহাট হাই স্কুল স্টপেজ। স্কুলের পাশ দিয়ে চলে গেছে একটা রাস্তা, ওই রাস্তাটি গিয়েছে ঝিকুরবেড়িয়া গ্রামে ওখানেই বাবা বড় কাঁছারী মন্দিরটি অবস্থিত।
বড় কাঁছারী কথাটির অর্থ হল বড় কোর্ট। জায়গাটি কলকাতা থেকে ত্রিশ কিলোমিটারের দুরুত্ব হবে। এটির আরেকটি নাম হলো ভুতের কাঁছারী। এখানে শিব যিনি হিন্দুদের দেবতাদের মধ্যে অন্যতম, এবং ভূত-প্রেতের দেবতা, পরিচিত হোন ভূতনাথ বলে।
মন্দিরটি অবস্থিত একটি বড় অশ্বত্থ গাছের নিচে, আর গাছটির গায়েই রয়েছে একটি শিবলিঙ্গ। হিন্দু-মুসলিম সব ধর্মের লোকজন এখানে পুজো দিতে পারে, এবং বাবা ভূতনাথের চরণে নিজের প্রার্থনা করতে পারে। এর মাধ্যমে বড় কাঁছারী হয়ে উঠেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি অন্যতম দৃষ্টান্ত।
বড় কাঁছারী মন্দির বিখ্যাত হলো নিঃসন্তানদের, সন্তানসুখের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য। এছাড়াও জমিজমা সংক্রান্ত সমস্যা, অসুখ, প্রেমে বাধা, এবং বিয়ে না হওয়া… এসবের জন্য এখানে লোকে পূজা দিতে আসে। বাতাসা আর চিনির রঙিন সন্দেশ আর প্যারা হলো প্রসাদ। মন্দিরটির সামনে গেলে দেখা যায়, হাজার হাজার কাগজ লাল সুতা দিয়ে বাঁধা রয়েছে রেলিংয়ে। এই কাগজে সকলে নিজের নিজের মনের বাসনা লিখে, বাবা ভূতনাথ এর কাছে সমর্পণ করে। তারা বিশ্বাস করে বাবার কাঁছারীতে দেওয়া এই লিখিত আবেদন ঠিকই গৃহীত হবে।
এখানে সন্তান লাভের আশায় অনেকে প্রার্থনা করে যাচ্ছে। তাদের প্রার্থনা যখন পূর্ণ হয়, সন্তানসহ এখানে এসে, পুকুরে চান করে, গন্ডি কেটে পুজো দিয়ে থাকেন। ছেলে হলে পূজোর সময় দিতে হয় একটা মাটির গোপাল, আর মেয়ে হলে দিতে হয় একটা মাটির সখী । বাচ্চাগুলোকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে আনা হয় এই পুজোর জন্য। মন্দির চত্বরে কিছু মহিলাদের দেখতে পাওয়া যায়, তারা চন্দনের ফোঁটা লাগিয়ে দেন বাচ্চাগুলোর কপালে।প্রধানতঃ মঙ্গল এবং শনিবার সব থেকে বেশি ভিড় দেখতে পাওয়া যায় এই মন্দিরে বর্তমানে রবিবারে ও প্রচুর পরিমাণে পূজা দিতে আসেন । সন্তান নিয়ে যারা পুজো দিতে আসে তারা বেশিরভাগই দূর থেকে আসে এবং ম্যাটাডোর ভাড়া করে, তাতে ব্যান্ডপার্টি চাপিয়ে বাজাতে বাজাতে আসে! ব্যাপারটা বেশ দেখার মত হয়! এছাড়াও নীল পূজার সময় এবং শ্রাবণ মাসে এই মন্দিরে বেশ ভিড় হয়।
বড় কাঁছারীর এমনিতে কোন লিখিত ইতিহাস পাওয়া যায় না। তবে জনশ্রুতিতে বেঁচে আছে এর ইতিহাস। শোনা যায় নবাব আলীবর্দী খানের শাসনকালের শেষ সময়টা, মারাঠা বর্গীরা আক্রমণ করেছিল বাংলা। তাদের উৎপাতের দৌরাত্ম্যে স্থানীয় গ্রামের লোকজন বাধ্য হয় কাছের একটি জঙ্গলে আশ্রয় নিতে। এই জঙ্গলটি ছিল আদপে শ্মশান। মারাঠা বর্গীরা হিন্দু হওয়ার দরুন এই জঙ্গলে ভুতের ভয়ে প্রবেশ করতে রাজি হয় না। কিছুদিন বাদে এই শ্মশানে এসে উপস্থিত হন একজন সাধু। তিনি তার অলৌকিক ক্ষমতাবলে, গ্রামের লোকজনদের সমস্যা এবং শারীরিক অসুস্থতা সারিয়ে দেন। এরপর কয়েক বছর পর, মারাঠাদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়ে যায়। তখন গ্রামটি আবার সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে। পরবর্তীকালে সাধুর মৃত্যুর পর পর এখানেই তাকে সমাধিস্থ করা হয়। সমাধিস্থ করার কিছুদিনের মধ্যেই তার কবরে থেকে একটি অশ্বত্থ গাছ গজিয়ে ওঠে। সবার বিশ্বাস হয়, সাধু বাবা শিবের অংশ ছিলেন এবং মৃত্যুর পরেও এই অশ্বত্থ গাছের রূপে, তিনি সব গ্রামবাসীকে রক্ষা করার জন্য ফিরে এসেছেন। তার পর থেকেই এই জায়গাটি পূজিত হতে থাকে ভূতনাথের কাছারি হিসেবে।
পরবর্তীকালে আরেকটা মত শোনা যায় যে, ১৯৭৮ সালের বিধ্বংসী বন্যায় প্রাচীন অশ্বত্থ গাছটি ভীষণভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। স্থানীয় লোকজন সেই গাছটির পাশে আরেকটি নতুন অশ্বত্থ গাছ লাগিয়ে দেন, এবং সময়ের প্রভাবে সেই নতুন গাছটি বড় হয়ে, এই পুরনো গাছটির জায়গা নিয়ে নেয়। একটা অন্যরকম পরিবেশে এই মন্দিরটার। এখানে সংস্কৃতিটা আর পাঁচটা ভূতনাথ মন্দিরের থেকে আলাদা। বছরের পর বছর বছর ধরে, মানুষ নিজের বিশ্বাসে ভর করে এসে মন্দিরে পূজো দিয়ে চলেছে। সেদিকে দেখতে গেলে, ভূতনাথের মন্দির হিসেবে বড় কাঁছারীর গুরুত্ব অপরিসীম।