আমাদের ভারতীয় দর্শনে বলা হয়েছে-- যে পড়ে না, সে বাঁচে না। বাঁচতে হলে প্রতিনিয়ত তাকে পড়তে হবে। "পড়া" শব্দটি এখানে দুটি অর্থ প্রকাশ করছে। একটি স্থানচ্যুত হওয়া, অপরটি স্বাধ্যায়। একটি স্ব-স্থান হতে চ্যুত হবার ইচ্ছে অন্যটি জিজীবীষা বা জানার ইচ্ছে। খুব ভালো করে ভেবে দেখলে বোঝা যায়, দুটোই কিন্তু মূলতঃ একই অর্থ বহন করছে। অপ্রমত্ত "স্ব-অধ্যায়ী" অর্থাৎ অ-চঞ্চল পাঠক (মনোযোগী পড়ুয়া) প্রতি মূহুর্তই কিন্তু স্থানচ্যুত হয়ে চলেছে। অর্থাৎ, বিষয়টি জানার আগে একজন নিবিষ্ট পাঠক যে অবস্থানে ছিলেন, জানার বা পাঠের পর কোনোভাবেই আর সেই স্থানে তিনি থাকেন না। তার স্থানচ্যুতি অবশ্যই ঘটবে। এটাকেই কি ঠাট্টা করে বলে - লেখাপড়া করে যে, গাড়ি চাপা পড়ে সে! তবুও মানুষ পড়ে। কারণ, সে বাঁচতে চায়। আর বাঁচতে হলে যে তাকে "পড়তে" হবেই। বাঁচার ইচ্ছের মধ্যেই রয়েছে জানার ইচ্ছে, শোনার ইচ্ছে। জিজীবীষা হতে শুশ্রূষা। ভালো ভাবে বাঁচতে হলে এদুটো অর্থাৎ বাঁচার অদম্য ইচ্ছে এবং একটু যত্ন, নিজের প্রতি -- অতি প্রয়োজনীয়। আর এ দুয়েরই মধ্যে রয়েছে মৃত্যুর পরের ধাপ অ-মৃত্যুর বা অমৃতের হাতছানি। এই যে বাঁচার গভীরতম আকুতি, কিছুতেই মরব না! তার উপশমের দাওয়াই উপনিষদে চমৎকার ভাবে বলা আছে। সেখানে বলা হয়েছে, যদি তুমি বাঁচতে চাও তবে তুমি সারাটি জীবনে একটি কাজ হতে কখনোই অবসর নেবে না। সেটি কি? "অপ্রমত্ত স্বাধ্যায়"। অপ্রমত্তের কথা আগেই বলেছি, অর্থাৎ অচঞ্চলতা। স্বাধ্যায় অর্থে স্ব-অধ্যায় -- নিজেকে পড়ো, নিজেকে ভাঙ্গো, নিজেকে ব্যবচ্ছেদ করে নিজেকে জানো। আত্মপরিচয় লাভ করো। নিজেকে জানলেই তুমি সব অর্থেই শক্তিমান হবে। অমর হবে। এই আত্ম-পরিচয়ের মধ্যে রয়েছে একটি জাতির সাংস্কৃতিক পরিচয়, তার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক , সামাজিক সহ সকল পরিচয় এবং অতি গুরুত্বপূর্ণভাবে তার ভৌগলিক পরিচয়। আজ "অবসরের কথা-বাসরে"র ৩৪তম পর্বে বাংলার ইতিহাস পরিচয়ের দ্বিতীয় পর্বে, অতি আবশ্যিক ভাবে আলোচিত হয়েছে প্রাচীন বাংলার ভৌগলিক অবস্থান 🌷
@debabratadas970427 күн бұрын
বাঙালি পরিচয়ে "বাঁচতে" চাইলে, "পড়তে" কিংবা "শুনতে'' হবে বই কি!😂🙏