Рет қаралды 5,583
• ব্যঞ্জন বর্ণের প্রমিত ...
• স্বরবর্ণের সঠিক ও ভূল ...
• ঠোঁটের ও চোয়ালের ব্যায়...
• জিভের ব্যায়াম শিখুন উচ...
• অ-কারান্ত ও-কারান্ত। অ...
শুদ্ধ ব্যঞ্জন বর্ণে উচ্চারণ নিয়ম
মোহাম্মদ সেলিম ভূঁইয়া, প্রশিক্ষক ও আবৃত্তিশিল্পী
অল্পপ্রাণ ও মহাপ্রাণ এর সঠিক উচ্চারণের নিয়ম ও কৌশ
বর্গ বর্গীয় বণ বর্গের ভাষা বৈজ্ঞানিক নাম
ক ক খ গ ঘ কণ্ঠ
চ চ ছ জ ঝ তালব্য
ট ট ঠ ড ঢ মূর্ধন্য
ত ত থ দ ধ দন্ত
প প ফ ব ভ ওষ্ঠ
অল্পপ্রাণ মহাপ্রাণ অল্পপ্রাণ মহাপ্রাণ
ক খ গ ঘ
চ ছ জ ঝ
ট ঠ ড ঢ
ত থ দ ধ
প ফ ব ভ
বিদ্যাসাগরের আগে বর্ণমালা শেখার যেসব বই রচিত ও প্রকাশিত হয়েছিল তার অধিকাংশই বস্তুতপক্ষে শিশুর বাংলা প্রথম পাঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। শ্রীরামপুর মিশনের লিপিধারা (১৮১৫), জ্ঞানারুণোদয় (১৮২০), রামমোহন রায়ের গৌড়ীয় ব্যাকরণ (১৮৩৩), শিশুবোধক, বঙ্গবর্ণমালা (১৮৩৫), রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের শিশুসেবধি, বর্ণমালা (১৮৪০), কলিকাতা স্কুল বকু সোসাইটির বর্ণমালা প্রথম ভাগ (১৮৫৩), ও বর্ণমালা দ্বিতীয় ভাগ (১৮৫৪) এবং হ্যালহেডের এ গ্রামার অফ দি বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ সহ (১৭৬৮) অন্যান্য বইয়ের মধ্যে বিদ্যাসাগরের পূর্ববর্তী বাংলাভাষা শিক্ষার প্রথম পাঠ হিসেবে সর্বাগ্রে নাম করতে হবে বিদ্যাসাগরেরই সুহৃদ পণ্ডিত মদনমোহন তর্কালঙ্কারের শিশুশিক্ষা প্রথম ভাগ (১৮৪৯) বইটির। শিশুর প্রথম পাঠ হিসেবে এটি উল্লেখযোগ্য বই।
ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ায় বাংলা প্রাইমার লেখায় যে জোয়ার এসেছিল তার কারণ ঔপনিবেশিক ইংরেজ সরকার তাদেরই প্রয়োজনে একটি শিক্ষিত শ্রেণী গড়ে তুলতে চেয়েছিল। শাসনকাজের প্রয়োজনে শাসিত প্রজাদের মধ্যে যেমন ইংরেজি জানা একটা শ্রেণীর প্রয়োজন তেমনি শাসক ইংরেজ ও প্রজাকুলের এই শিক্ষিত শ্রেণীর মধ্যে স্থানীয় অর্থাৎ বাংলাভাষা চর্চারও প্রয়োজনীয়তা ছিল। বস্তুত ভাষা শিক্ষার পাশাপাশি জ্ঞানার্জন ও তা চর্চার কোনো বিকল্প ছিল না। এ কাজে মাতৃভাষার চর্চাও গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়েছিল। ওই সময় শিক্ষা বিস্তার, স্কুল প্রতিষ্ঠা, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও প্রকাশের জন্য অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। আমরা জানি শিক্ষা নিয়ে এ সময় অনেক কমিশনও গঠিত হয়, যারা জরিপ চালিয়ে প্রকৃত অবস্থা জেনে করণীয় নির্ধারণ করতে চেয়েছে। এসব প্রতিবেদনে শিক্ষা বিস্তারে অগ্রগতির অন্তরায় হিসেবে প্রায়ই পাঠ্যবইয়ের অভাবের কথা বলা হয়। ১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জুন সংবাদ পূর্ণচন্দ্রোদয়-এর সম্পাদকীয়তে লেখা হয়:
"গভর্নমেন্টের যে কয়টা পাঠশালা আছে তাহাতে বাংলাভাষা শিক্ষা দিবার শৃঙ্খলামাত্র নাই।---ভাষা শিক্ষার নিমিত্ত কেবল বর্ণমালা, নীতিকথা ইত্যাদি দুই-তিনখানি পুস্তক ভিন্ন অন্য পুস্তক পাঠ হয় না, তাহাতে ভাষার সম্যক জ্ঞান বৃদ্ধির কেমন সম্ভাবনা পাঠকবর্গ বুঝিতে পারিবেন।"
আবার বিভিন্ন সরকারি প্রতিবেদনে উপযুক্ত পাঠ্যবইয়ের অভাবে স্কুলে ছাত্রসংখ্যা কমে যাওয়ার কথাও উল্লিখিত হতে দেখা যায়। সব মিলিয়ে ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে একটা ভালো বাংলা প্রাইমারের চাহিদা তৈরি হয়। ঠিক এই সময় বিদ্যাসাগর বর্ণপরিচয় রচনা ও প্রকাশ করেন।
শিশুদের জন্য বর্ণপরিচয় রচনার গোড়ায়ই এসে পড়ে বর্ণমালার কথা। আমরা জানি ব্রাহ্মীলিপি থেকেই বিবর্তিত হয়ে বাংলা বর্ণমালার উদ্ভব হয়েছে। এ বিবর্তন প্রক্রিয়া চলেছে তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে। তবে বলা যেতে পারে, বিদ্যাসাগরের হাতেই বাংলা বর্ণমালার যথাযথ উন্নতি হয়েছে, যে মৌলিক উন্নয়নের পর পরবর্তী সার্ধশতবছরে মাত্র কিছু সংস্কারমূলক কাজ হয়েছে। তাকে প্রথমত বর্ণমালার প্রকৃতি ও সংখ্যা নির্ধারণ করতে হয়েছে। ১৭৬৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হালেদের বইয়ে স্বরবর্ণের সংখ্যা ছিল ১৬। পরবর্তী প্রায় একশত বছর মদনমোহনের শিশুশিক্ষা প্রথম ভাগ পর্যন্ত স্বরবর্ণের সংখ্যা ১৬টিই ছিল। এগুলো হলো অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, ৠ, ঌ, ৡ, এ, ঐ, ও, ঔ, অ০, অঃ। বিদ্যাসাগর এই সংখ্যা কমিয়ে ১২তে নামালেন। তিনি ভূমিকায় লিখলেন:
"বহূকালাবধি বর্ণমালা ষোল স্বর ও চৌত্রিশ ব্যঞ্জন এই পঞ্চাশ অক্ষরে পরিগণিত ছিল। কিন্তু বাঙ্গালা ভাষায় দীর্ঘ ৠ-কার ও দীর্ঘ ৡ-কারের প্রয়োজন নাই। এই নিমিত্ত ঐ দুই বর্ণ পরিত্যক্ত হইয়াছে। আর সবিশেষ অনুধাবন করিয়া দেখিলে অনুস্বার ও বিসর্গ স্বরবর্ণ মধ্যে পরিগণিত হইতে পারে না। এই নিমিত্ত ঐ দুই বর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ মধ্যে পঠিত হইয়াছে। আর চন্দ্রবিন্দুকে ব্যঞ্জনবর্ণস্থলে এক স্বতন্ত্র বর্ণ বলিয়া গণনা করা গিয়াছে। "ড, ঢ, য এই তিন ব্যঞ্জনবর্ণ পদের মধ্যে অথবা পদের অন্তে থাকিলে, ড়, ঢ়, য় হয়।""
বিদ্যাসাগরের এই মৌলিক সংস্কারের ১২৫ বছর পর স্বরবর্ণে মাত্র আর একটি সংস্কার ঘটেছে, তাহলো ঌ বর্ণটি বাদ দেওয়া। এখন স্বরবর্ণ ১১টি। ব্যঞ্জনবর্ণ ছিল ৩৪টি। বিদ্যাসাগর তাতে নতুনভাবে ছয়টি বর্ণ যুক্ত করেন। অনুস্বার ও বিসর্গকে স্বরবর্ণ থেকে ব্যঞ্জনবর্ণে নিয়ে এসে চন্দ্রবিন্দুকেও যোগ করে দিলেন। ড, ঢ, য-এর দ্বিবিধ উচ্চারণের ক্ষেত্রে নিচে ফুটকি বা শুন্য দিয়ে নতুন তিনটি ব্যঞ্জন অক্ষর আবিষ্কার করলেন। তা ছাড়া বিদ্যাসাগর দেখলেন, "বাঙ্গালা ভাষায় একারের ত, ত্ এই দ্বিবিধ কলেবর প্রচলিত আছে।" তাই এটিকেও ব্যঞ্জনবর্ণে যুক্ত করেছেন। আর ক্ষ যেহেতু ক ও ষ মিলে হয় "সুতরাং উহা সংযুক্তবর্ণ, এ জন্য অসংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ গণনাস্থলে পরিত্যক্ত হইয়াছে।" এভাবে তার হাতে ব্যঞ্জনবর্ণ হলো ৪০টি। এর মধ্যে স্বরবর্ণ ঌ-এর মতই শুধু অন্তঃস্থ 'ব' বর্ণটি বাদ যায়। এখন ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯টি। (তথ্যসূত্র: টু ইউকেপিডিয়া)