Рет қаралды 5,254
মৃত্যু পরবর্তী জীবন বা পরকাল হল একটি জগতের ধারণা, যে ধারণা অনুসারে ব্যক্তির শরীরের মৃত্যু হয়ে গেলেও তার আত্মপরিচয় বা চেতনার অস্তিত্ব থেকে যায়। পরকালের বিভিন্ন ধারণা অনুযায়ী মৃত্যুর পরেও থেকে যাওয়া ব্যক্তির এসেন্স কোন আংশিক উপাদান অথবা পূর্ণাঙ্গ আত্মা বা স্পিরিট হতে পারে। এই এসেন্স কোন ব্যক্তিগত পরিচয় বহন করতেও পারে আবার নাও পারে যেমন ভারতীয় দর্শনের নির্বাণ। পরকালের উপর বিশ্বাস প্রকৃতিবাদী দর্শন থেকে আসতে পারে অথবা অতিপ্রাকৃতে বিশ্বাস থেকে আসতে পারে। এই বিশ্বাস এটারনাল অবলিভিয়ন ধারণায় বিশ্বাসের বিপরীত।
কিছু লোকায়ত মতবাদ অনুসারে, মৃত্যুর পরও অস্তিত্ববহন করা এই সত্তা কোন অতিপ্রাকৃত জগতে অবস্থান করে, আবার অন্যান্য লোকায়ত মতবাদ অনুসারে এই সত্তার পুনর্জন্ম ঘটে এবং পুনরায় জীবনচক্র শুরু হয়। এক্ষেত্রে পূর্বের জীবন সম্পর্কে কোন স্মৃতি থাকে না। এই মতবাদ অনুসারে সত্তার একটি অতিপ্রাকৃতিক জগতে প্রবেশের আগ পর্যন্ত বারবার জন্ম ও মৃত্যুর প্রক্রিয়া চলতেই থাকে। পরকাল সংক্রান্ত বেশিরভাগ বিশ্বাসেরই উৎপত্তি ধর্ম, এসোটেরিসিজম এবং অধিবিদ্যা থেকে।
কিছু বিশ্বাস ব্যবস্থা বিশেষ করে আব্রাহামিক ধর্মেগুলোর বিশ্বাস অনুযায়ী মৃত্যুর পর সত্তা জীবিতাবস্থায় পৃথিবীতে তার কৃতকার্য ও বিশ্বাস অনুযায়ী ঈশ্বর বা কোন স্বর্গীয় বিচারের দ্বারা নির্ধারিত বিশেষ স্থানে গমন করে। অন্যদিকে ভারতীয় ধর্মগুলোর পুনর্জন্ম বিশ্বাস অনুযায়ী মৃত্যুর পর কৃতকার্য অনুসারে সত্তার প্রকৃতি সরাসরি নির্ধারিত হয়ে যায়, এতে ভিন্ন কোন সত্তার সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয় না।
অধিবিদ্যীয় মডেলগুলোতে আস্তিকরা সাধারণত একধরনের পরকালে বিশ্বাস করে থাকেন যা মৃত্যুর পর তাদের জন্য অপেক্ষা করে। কিছু সাধারণ অ-আস্তিক্যবাদী ধর্মের সদস্যরা পরকালে বিশ্বাসমুখী হন, কিন্তু এই বিশ্বাসে কোন ঈশ্বর থাকে না। স্যাডিউসিজ নামে একটি প্রাচীন ইহুদি সম্প্রদায় আছে যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করলেও পরকালে বিশ্বাস করতেন না।
অনেক ধর্মই, তা সে খ্রিষ্টধর্ম বা ইসলাম বা অনেক পৌত্তলিকতাবাদী বিশ্বাসব্যবস্থার মত পরকাল বলতে মৃত্যুর পর অন্য এক জগতে আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাসী হোক অথবা হিন্দুধর্ম বা বৌদ্ধধর্মের অনেক ধারার মত পুনর্জন্মেই বিশ্বাসী হোক, সকল ক্ষেত্রেই বিশ্বাস করা হয় যে পরকালে কোন ব্যক্তির অবস্থা হচ্ছে জীবিতাবস্থায় তার কৃতকার্যের শাস্তি অথবা পুরস্কার।
জন্মান্তরবাদ বা পুনর্জন্ম একটি পরকাল সম্পর্কিত ধারণা যা হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, রসিক্রুশিয়ান, থিওসফিস্ট, স্পিরিটিস্টগণ এবং উইক্কানদের বিশ্বাস ব্যবস্থায় পাওয়া যায়। এছাড়া কাব্বালিস্টিক ইহুদি ধর্মেও পুনর্জন্মকে গিলগুল নেশামত (আত্মার পুনর্জন্ম) নামে একটি বিশ্বাস হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।[১] জন্মান্তরবাদের ধারণা অনুযায়ী, মৃত্যুর পর আত্মা আরেকটি নতুন জীবন শুরু করে।
মোক্ষ বা মুক্তি বা ঈশ্বরের সাক্ষাত অর্জনের পূর্ব পর্যন্ত পুনর্জন্মের এই ধারা চলতে থাকে এবং মোক্ষ প্রাপ্তির মাধ্যমে এই জন্মান্তরের সমাপ্তি ঘটে ।
জন্মান্তরবাদ বিশ্বাসের আরেকটি দিক হচ্ছে, এই বিশ্বাস অনুযায়ী প্রতিটি জীবন একই সাথে একটি পরকাল এবং পূর্বকাল। এই বিশ্বাস মতে, বর্তমান জীবন হল পূর্বজন্ম বা কর্মের ফল। এই বিশ্বাস অনুযায়ী আত্মার কখনো সৃষ্টি বা ধ্বংশ হয় না । আত্মাকে একটি নিত্য সত্তা হিসাবে দেখা হয় ।
রসিক্রুশিয়ানগণ,[২] মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মতই লাইফ রিভিউ পর্যায়ের কথা বলেন, যা মৃত্যুর ঠিক পরপরই কিন্তু নতুন জীবন শুরু এবং স্বর্গীয় বিচারের পূর্বে ঘটে। এই ঘটনাটি অনেকটা জীবনের চূড়ান্ত পর্যালোচনা বা চূড়ান্ত রিপোর্ট এর মত।[৩]
আব্রাহামিক ধর্মগুলো অনুসারে ব্যক্তি মৃত্যুর পর পৃথিবীতে তার কৃতকার্য বা বিশ্বাস অথবা প্রিডেস্টিনেশন বা ভাগ্য এবং আনকন্ডিশনাল ইলেকশন এর ভিত্তিতে স্বর্গ বা নরকে যান অথবা মৃত ব্যক্তির পুনরুত্থানের সময় পর্যন্ত একটি মধ্যবর্তী অবস্থায় অপেক্ষা করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বর্গ হল ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তির জন্য মৃত্যুর পর পুরস্কারস্বরূপ প্রাপ্ত একটি অবস্থা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বর্গকে ঈশ্বরের সাথে চিরমিলনের অবস্থা হিসেবে দেখা হয়। অন্যদিকে নরক হল পাপী ব্যক্তিদের শাস্তি এবং পীড়নের জন্য একটি অবস্থা। এটা চিরকাল ব্যাপী অথবা একটি নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত শাস্তির জায়গা যেখানে ব্যক্তিকে অন্যান্য পাপাত্মার এবং পতিত স্বর্গদূতদের সাথে বন্দিদশায় থাকতে হবে।
লিম্বো খ্রিষ্টধর্মের একটি জনপ্রিয় বিশ্বাস। মধ্যযুগের ধর্মতাত্ত্বিকদের দ্বারা এই মতটি বিকশিত হয়। কিন্তু যথেষ্ট জনপ্রিয় মত হলেও একে রোমান ক্যাথলিক চার্চ কখনও একটি ডগমা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় নি। তবুও চার্চগুলোতে এটাকে জনপ্রিয় ধর্মতাত্ত্বিক মতবাদ হিসেবে ধরা হয়। লিম্বো মতবাদ অনুসারে কোন বাপ্টিজম বা অভিসিঞ্চনের মধ্য দিয়ে না যাওয়া কোন নিষ্পাপ আত্মা যেমন শিশু অবস্থায় মৃতের নিষ্পাপ আত্মা, যিশুখ্রিষ্টের জন্মের পূর্বে মৃত কোন নিষ্পাপ ব্যক্তির আত্মা অথবা যারা অভিসিঞ্চনের পূর্বেই মারা গেছেন তাদের আত্মা স্বর্গ বা নরক কোথাও অবস্থান করে না। তাই এই আত্মারা না ইশ্বরদর্শন লাভ করে, না কোন শাস্তিপ্রাপ্ত হয়। কারণ তারা কোন ব্যক্তিগত পাপে পাপী নন কিন্তু অভিসিঞ্চিত না হবার কারণে তারা জন্মগত পাপের বোঝাও বহন করেন। তাই তারা সময়ের শেষ হবার আগ পর্যন্ত একটি প্রাকৃতিক সুখের অবস্থায় থাকবেন, কিন্তু অতিপ্রাকৃতিক সুখ তারা লাভ করবেন না। কিছুকিছু ক্ষেত্রে লিম্বোকে একটি মধ্যবর্তী অবস্থা বা বন্দী অবস্থা বলা হয়েছে।[৪]