Рет қаралды 269,063
#শোনাগল্প ২১
বাংলাদেশের একজন কন্ঠশিল্পী, মূলত: রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন তিনি। নিজেকে রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী হিসেবেই পরিচয় দিতেন। তখনও টিভির পর্দায় ঘনঘন তার মুখচ্ছবি দেখা যেতো না, সবে যাত্রা শুরু তার। ভারতের দেবব্রত বিশ্বাসের গায়কীর অনুকরণ তার স্পষ্ট । কথায় কথায় বলেন, জর্জদা এমন করে গান করেন যে তাকে অনুকরণ না করলে চলেই না।
দেবব্রত বিশ্বাস বাংলাদেশের মানুষ। কিন্তু পরে ভারতীয় হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছেন। বিশ্বভারতীর এক সময় তার গায়কী নিয়ে আপত্তি ছিলো ঢের। আকাশবাণীতে তিনি দীর্ঘকাল নিষিদ্ধ ছিলেন এই জটিলতায়। কিন্তু অসম্ভব দরদ ঢালা কণ্ঠে তার গায়কী সুরেলা ইন্দ্রজাল তৈরি করে, এটি সত্য। পরিচিত মহলে তার ডাকনাম জর্জ।
আমাদের দেশীয় তরুণ কণ্ঠশিল্পী এই জর্জদা বলতে অজ্ঞান।
রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভারতীয় শিল্পীরা সদলবলে তখন বাংলাদেশে বেড়াতেন। দ্বি-পাক্ষিক সংস্কৃতির আদানপ্রদান তখন তুঙ্গে। রবীন্দ্রনাথের নাম নিয়ে কোনো আসর বা সভা করলেই কলকাতার কেউ না কেউ তখন বিশেষ অতিথি। জর্জদা তেমনি এক সফরে এসেছেন, সম্ভবত ১৯৭৭-৭৮ সালের শীতের মরশুমে। অবশ্য দেবব্রত বাংলাদেশে আসতেন মনের টানে। সুযোগ পেলেই তিনি এদেশে এসেছেন। কিশোরগঞ্জে জন্ম তার। এবার সফরে এসে কয়েকটা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দিয়েছেন, গান শুনিয়েছেন।
ভক্ত কণ্ঠশিল্পীটি তাকে পরম নিষ্ঠায় সেবা করার সুযোগ পেয়ে ধন্য। তাকে তিনি ছায়ার মতোন অনুসরণ করেন। সেই সীজনে আমাদের ওয়াইজঘাটের বুলবুল ললিতকলা একাডেমীতে বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান। দেবব্রত সেখানে বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন কিন্তু ঠান্ডায় শরীর বেহাল হয়ে যাবার ফলে তিনি গান গাইতে পারবেন না। বয়স হয়েছে, দমে কুলায় না অসুস্থ শরীরে তার।
ভক্তটি এই প্রতিষ্ঠানে সুপরিচিত। প্রতিষ্ঠানটির রবীন্দ্রসঙ্গীতের চর্চার সাথে নিযুক্ত তিনি। সুতরাং তিনি গান গাইবেন, বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই আগেই নির্ধারিত ছিলো।
মঞ্চে উঠে তরুণ গায়ক প্রথমে জর্জদার শরীর খারাপ, তাই আজ তার কণ্ঠের সুধা থেকে বঞ্চিত হলাম আমরা ইত্যাদি বিষয় বলার পর জানান তিনি, জর্জদার প্রিয় গানটি গাইবেন আজ। আকাশ ভরা সূর্য-তারা, বিশ্বভরা প্রাণ! তিনি আরো জানান, এই গানটি গত দু'দিন প্রাকটিস করেছেন এবং দু'দিন আগে জর্জদা তার ভক্তকে যখন ভক্তের বাড়িতে গানটি গেয়ে শুনিয়েছেন এবং সে সুরটিই রেকর্ড করে গত দুইদিন ধরে আয়ত্ত্ব করেছেন তিনি।
তরুন শিল্পী গানটি গাইলেন।
হাততালি পড়লো অনেক অনেক।
অনুষ্ঠানের শেষে দেবব্রত ডাকলেন তাকে। হলঘরের বারান্দায়। এতদিনে এই তরুণের সাথে সখ্য জমে গেছে ঢের। তাকে তিনি তুই-তোর-তোকে করে বলেন।
'কী রে! তুই 'আকাশভরা সূর্য-তারা' গানটা গাইবার সময় এমন গলা কাঁপাইলি ক্যান? আর শব্দগুলি ছাইড়া ছাইড়া গাইলি ক্যান?'
প্রবীন শিল্পীর প্রশ্ন শুনে তরুন খুব অবাক।
-সে কী জর্জদা! আপনেই তো পরশু সন্ধ্যায় এমন শব্দগুলি আলাদা কইরা, একটু ছাইড়া ছাইড়া গাইলেন। এই রকম সুরই তো ছিলো। আমি রেকর্ড করছি নিজে!- তরুন তার জর্জদাকে উল্টো প্রশ্ন করে। তার কাছে জর্জদার গাওয়া টেপ-রেকর্ডটি স্বাক্ষী মজুদ আছে।
এবার প্রবীন শিল্পী হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়েন আর কী!
'ওই ব্যাটা! আমার নইলে হাঁপানী আছে, তাই সেদিন এমুন কইরা গাইছি। তোরও কি হাঁপানী আছে নাকি?'
........................................................................................
দেবব্রতের গাওয়া রবীবাবুর এই গানটি আমার খুব প্রিয়।