Рет қаралды 3,810
ওম শব্দের অর্থ কি?What is the meaning of the word Om?
আমরা নিত্য পুজায় মন্ত্র উচ্চারণে, কোনো কাজের শুরুতে "ওঁ" উচ্চারণ করে থাকি। কিন্তু আমরা কতটা গুরুত্বের সহিত বা কতটা গভীরভাবে এই আদি শব্দ ওঁ কে উচ্চারণ করে থাকি? চলুন জেনে নিই কিছু কথা!
ওঁ কে বলা হয় আদি ধ্বনি। এর অন্য নাম হল প্রণব। ইংরেজীতে বলা হয় Premordial sound. Premordial মানে হলো আদি। এখানে আদি কথাটা এত উচ্চারণ হওয়ার কারণ কি? কারণ হলো, আমাদের ধর্মই সনাতন। আর সনাতনই তো আদি।
এই ব্রম্মান্ড যখন সৃষ্ট হয় তখন থেকেই ব্রম্মান্ডের নিজস্ব একটা শব্দ রয়েছে। এই জায়গায় শব্দের স্থলে ব্যবহার করবো কম্পন। কম্পনের ফলেই তো শব্দ হয়। শুনলে অবাক হতে হয়, ব্রম্মান্ডের কেন্দ্র থেকে যে কম্পন বা শব্দ সৃষ্ট হয় সেটা আমরা ওঁ উচ্চারণ করলে যে কম্পন বা শব্দ উৎপন্ন হয় তার অনুরুপ। তারমানে বুঝুন আমাদের নিজেদের মধ্যেও এক ব্রম্মান্ড রয়েছে। যাঁকে বলা হয় পরমাত্মা। এই পরমাত্মাকে সৃষ্টির সাথে মিলিয়ে দিতে পারে একমাত্র "ওঁ"। এখানেও অবাক হলেন তাইনা? কিভাবে এই ধ্বনি আমাদেরকে সৃষ্টির সাথে বা ব্রম্মান্ডের সাথে মিলিয়ে দিতে পারে?
তাহলে জেনে নিই! আমরা যখন ওঁ উচ্চারণ করি, তখম আমাদের শরীর থেকেও একপ্রকার কম্পন নির্গত হয়। আর ব্রম্মান্ডের নিজস্ব কম্পন তো রয়েছেই। যখন আমাদের শরীরের কম্পন আর ব্রম্মান্ডের কম্পন পরষ্পরের সাথে মিলে যায় তখন অনুনাদ সৃষ্টি হয়। (অনুনাদ মানে যখন দুইটি একই রকমের তরঙ্গ একে অপরের উপরের উপর আপতিত হয় তখন আরো অধিক জোরে কম্পনের সৃষ্ট হওয়াকেই অনুনাদ বলে)। আর যখনই অনুনাদের সৃষ্টি হয় ঠিক সেই মুহুর্তে আমাদের শরীর, মন সবকিছুই ব্রম্মান্ডের বা সৃষ্টির সাথে মিলে যাই। তখন আমরা সৃষ্টির শক্তিকে উপলব্ধি করতে পারি। তখনই শরীরে, মনে পরম শান্তি অনুভুত হয়। এখনও যদি শান্তি জিনিস টা বা অনুনাদের ব্যপার টা পরিষ্কার না হয় আরো কিছু উদাহরণ দেয়া যাক।
আমরা সবাই শিশু দোলনায় ঘুমাতে দেখেছি। এও জানি যে, শিশু বিছানার তুলনায় দোলনায় তারাতারি ঘুমিয়ে পরে। কারণ, যখন দোলনায় দোল দেয়া হয়, দোল দিতে দিতে একসময় শিশুর শরীরের কম্পন আর বাতাসের কম্পন মিলে গিয়ে অনুনাদের সৃষ্টি হয় আর তখনই শিশুর শরীরে একরকম প্রশান্তি আসে। প্রশান্তি আসলেই শিশু ঘুমিয়ে পরে। এই ঘুমিয়ে পরাটাকে আমাদের চৈতন্য লাভের সাথে তুলনা করতে পারি। এই চৈতন্য মানে সৃষ্টিতে হারিয়ে যাওয়া বা ব্রম্মান্ডের মাঝে ডুব দেয়া।
আমরা যখন দুইজন একসাথে গান গায় তখন দেখবেন, যখন উভয়ের সুর একে অপরের সাথে মিলে যায় তখন কিরকম একটা ভালোলাগা বা গান গাইতে উৎসাহ জাগে বা গানটা অনেক সুন্দর হয়ে উঠে। এরকম ভালোলাগাটাই অনুনাদ, আশাকরি বুঝতে পারা যাবে এখন।
ঠিক একইভাবে, আমাদেরও পরম শান্তি লাভ করতে হলে ব্রম্মান্ডের গানের সাথে বা তরঙ্গের সাথে আমাদের তরঙ্গের অনুনাদ ঘটাতে হবে। তখনই শিশুর ঘুমিয়ে পরার মত অন্য এক উচ্চতায় আমাদের শরীর ও মন উপনীত হবে।
এখম কিভাবে এই "ওঁ" উচ্চারণ করতে হবে? প্রথমে আমরা এই উচ্চারণ টাকে ভাঙবো। ভাঙ্গলে তিনটি ধ্বনি পাওয়া যাবে। সেগুলি যথাক্রমে অ, উ, ম।
"অ" উচ্চারণ টা হবে আমাদের শরীরের একেবারে গভীর থেকে। এর উৎপত্তিস্থল নাভিমূল বা উদরে। মানে, সরাসরি জিহ্বা তে আসবে।
"উ" জিহবার উপর ঘুরতে থাকবে।
"ম" উচ্চারিত হবে আমাদের ঠোঁটে। ঠোঁটেই শেষ হবে উচ্চারণ।
যখন আমরা "অ" উচ্চারণ করবো, আমাদের উদরে কম্পন সৃষ্টি হবে।
"উ" উচ্চারিত হওয়ার সময় বুক কম্পিত হতে থাকবে।
"ম" উচ্চারণের সময় আমাদের মস্তিষ্কের খুলি কম্পিত হতে থাকবে।
নির্জন স্থানে বসে, শরীরের গভীর থেকে " ওঁ" উচ্চারণ করতে হবে। উচ্চারিত হতে হত্র একসময় আমরা ব্রম্মান্ডের শক্তির সাথে মিলিত হয়ে যাবো।
তাহলে কথা হলো, সৃষ্টিকে জানতে হলে, সৃষ্টিতে মিলিত হতে হলে, শরীর ও মনের পবিত্রতা আনতে এই " ওঁ" মহাশক্তি ধ্বনিই আমাদের পথ দেখাবে। আমাদের মুক্তিই নীহিত আছে এই ধ্বনিতে। এ যেনো মোক্ষ লাভের একটা পথ।
"ওঁ" এই সৃষ্টি করে।
"ওঁ" এই পালন করে।
"ওঁ" এই ধ্বংস করে।
তারমানে হলো, ব্রম্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর অধিষ্ঠিত আছেন এই একটা ধ্বনিতে। যখন, বজ্রপাত হয়, বজ্রের ধ্বনিতেও "ওঁ" অন্তর্নিহিত থাকে।