Рет қаралды 3,169
দীর্ঘ ২৫ দিন ধরে অসুস্থ মানসিক ভারসাম্যহীন হারিয়ে যাওয়া পিতাকে খুজে বেড়ায় ছোট ছেলে আজাদ। ব্যাগে তার বাবার ছবি দিয়ে ছাপানো হারানো বিজ্ঞপ্তির অসংখ্য কপি আর লিকুইড গাম। নিজের এলাকার আসে পাশে থেকে শুরু করে পুরো শহর দেশ জুড়ে খুঝতে থাকে হারিয়ে যাওয়া বাবাকে। এদিকে সপ্তাহ ধরে রাস্তায় পড়ে থাকা বাবার খোজ পায় না স্বজনদের কেউ। ৭৫ বছর বয়সী অসুস্থ বাবা রাস্তায় পড়ে থেকে খুদা অবহেলা অযত্নে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে। লাখো মানুষের ভীড়ে আজাদ খুজে পায় না তার জন্মদাতা তার জীবনের অমুল্য সম্পদ তার বাবাকে। দিশেহারা সন্তান খুজতে থাকে বাবাকে আর বাবা দিনের পর দিন পরে থাকে রাস্তার কোনে বা নোংড়া ফুটপাতে।
কোন এক দরদী পুলিশ কর্মকর্তার নজড়ে পড়লে সে সেই বাবাকে পাঠিয়ে দেন মানবতার আশ্রমে। উদ্দেশ্য সর্বসাধারনের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের মাধ্যমে এই বাবার পরিবার খুজে পাবার চেষ্টা করা। আশ্রমের উদ্দোক্তা মানবতার সেবক এর ফেইসবুক পেইজে ১ কোটির অধিক ফ্যান ফলোয়ার আর আশ্রমের পেইজে ৩৫ লক্ষের অধিক ফ্যান ফলোয়ার। তাই এ ধরনের সংকট সমাধানে এত বড় ব্যাবস্থাপনা সত্যিই বিরল। ময়লা আবর্জনায় পড়ে থাকা অসুস্থ অসহায় এই বাবার আশ্রয় হয় বৃদ্ধাশ্রমে। বস্ত্র, বাসস্থান,খাদ্য,চিকিৎসা ও সেবার মাধ্যমে কিছুটা উন্নতি হতে থাকে এই বাবার। আশ্রম প্রতিষ্ঠাতার আলোচিত ফেইসবুক লাইভ এও খুজে পাওয়া যায় না এই বাবার পরিবার। এদিকে সন্তান আজাদ অস্থির চিত্তে হন্নে হয়ে খুজতে থাকে তার প্রানপ্রিয় বাবাকে। বাবাও ভিডিও লাইভে অনেক জিজ্ঞাসার পর শুধুই আজাদ বলতে পারেন। আর আজাদ বাবাকে খুজতে তার ফেইসবুক সহ কাগজে ছাপানো বিজ্ঞপ্তি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় লাগাতে থাকে আর বাবাকে খুজতে থাকে। তার শহর পেরিয়ে সে চলে যায় অন্য শহরে। খুজে পায় না তার বাবাকে। এক এক করে ২৫ দিন পার হয়ে যায়। একদিন সকালে আজাদ নোয়াখালী রেল স্টেশনে সকালের নাস্তা করতে বসে বাবার কথা ভাবতে ভাবতে আর ফেইস বুকে ঘাটতে ঘাটতে বৃদ্ধাশ্রমের সেই ফেইসবুকের লাইভটি দেখতে পান। আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে আজাদ, চোখে মুখে খুশির অশ্রু ছলছল, পুরো শরীর শিউরে ওঠে বাবাকে খুজে পাবার আনন্দে। ঠিকানা নিয়ে ফোন করে আশ্রমে। বাবার নাম বলে কিন্তু আশ্রম থেকে জানানো হয় তার বাবা এখানে নেই। তিনি মনে করেন তার বাবাকে কেউ নামে চিনছে না। তাই তিনি নোয়াখালী থেকে ঢাকায় আশ্রমের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয়। বহু প্রতিক্ষীত প্রত্যাশা আলো জ্বলছে তার মনে, বাবাকে ফিরে পাবার তীব্র আকাংখা নিয়ে এগিয়ে চলতে থাকে আজাদ।
দুপুর নাগাদ আশ্রমে এসে পৌছায়, চারিদিকে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, হালকা বৃষ্টি হচ্ছে, ঝড় বৃষ্টির আশংকা চারদিকে। আজাফ আশ্রমের গেইট দিয়ে প্রবেশ করে। এইতো একটু পরই হবে বাবার সাথে দেখা, আর একটু সময়, বাবার ছবিটা দেখলেই তারা আজাদকে নিয়ে যাবে তার বাবার কাছে, জড়িয়ে ধরবে বাবাকে। হাসি খুশি বাপ-ছেলে ফিরে যাবে বাড়িতে।
আশ্রম ম্যানেজার মিরাজ এলেন ছবি দেখে চিনতে পারলেন আজাদের বাবাকে। থমমত হয়ে গেলেন মিরাজ কি বলবেন বুঝে উঠতে একটু সময় লাগলো তার। দক্ষ সেবক দক্ষ ম্যানেজার মিরাজ শক্ত হয়ে আজাদকে জানালেন তার বাবা আর বেচে নেই। ৯ দিন আগেই আজাদের বাবা বার্ধক্যতা সহ খুব বেশী অসুস্থতায় থেকে ভালো হতে হতে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। আর তারা বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে মুসলিম রীতি অনুসারে মৃতের দাফনকার্য সম্পন্ন করেন। প্রচন্ড বজ্রপাতে আজাদ স্তম্ভিত হয়ে যায়।
যেখানে বাবাকে জড়িয়ে ধরবে আজাদ হেসে উঠবে দুজন একসাথে সেখানে বাবাকে শেষ দেখাও দেখা হবে না আজাদের। এমনকি বাবার কবরে মাটিও দেয়া হলো না আজাদের। দুমড়ে মুচড়ে গেলেন আজাদ, এ অনুভুতি প্রকাশ করার নয়। উপলব্ধিতেও আসার নয়। আজাদই জানে তার প্রচন্ড কষ্টের আর্তনাদের খবর। চারিদিকে ভারী বৃষ্টি শুরু হয় আর শুরু হয় আজাদের বাবাকে নিয়ে করুন আহাজারি। শেষ দেখাও হলো না বাবাকে, শেষ ঠিকানা কবরেরও বাবা বেওয়ারিশ।
একটি হৃদয়বিদারক সত্য ঘটনা বাবা হারানো যায় : ২৬ শে মে ২০২২
মারা যান : ১১ই জুন ২০২২
ছেলে জানতে পারেন : ২০শে জুন ২০২২
স্থান : চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার