তোমার ভিডিওটা ভালো লাগলো। তোমার চোখে প্রথম শুশুনিয়া দেখার অভিজ্ঞতা উপভোগ করলাম। আমি গত ২০ বছর ধরে শুশুনিয়া যাচ্ছি। বছরে একবার তো যাই-ই । কখনো কখনো একাধিকবার। সুতরাং পাহাড়টার অলি-গলি আমার খুবই চেনা। জীবনে প্রথম এসেছিলাম রক ক্লাইম্বিং কোর্স করতে। তার পর পাহাড়টার প্রেমে পড়ে গেছি। তোমার কৌতূহল নিরসনের জন্য কিছু তথ্য দিই। সেই সঙ্গে যারা এই কমেন্ট পড়তে আসবে তাদের জন্যও। বর্ষাকালে বেশি কেউ যায় না বলে এবং বর্ষার জল পেয়ে গাছপালা দ্রুত বাড়ে বলে জঙ্গল বেশি ঘন এবং দুর্গম মনে হয়। ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারিতে এই পাহাড়ের অন্য রূপ। তখন অনেক লোক পাহাড়ে আসে। প্রথম চূড়ার পথটা তো লোকের ভীড় লেগেই থাকে। প্রথম চূড়ায় যাবার অন্য একটা পথ আছে। পাহাড়ে ওঠার আগে যে মাঠটা আছে, যেখানে পিকনিক হয় এবং বাস পার্কিং হয়, তার অন্য দিক দিকে আর একটা পথ আছে। সেটা অনেকটা পাকদন্ডী কিন্তু খুব খাড়া নয়। সেই পথটা গিয়ে মিশেছে প্রথম চূড়া এবং দ্বিতীয় চূড়ার মধ্যে পথ যেখানে সবচেয়ে নিচুতে নেমেছে সেখানে। সেই জায়গাটা একটা চৌমাথার মোড়। বিপরীত দিকের পথটা চলে গেছে রক ক্লাইম্বিং এর অঞ্চলে। সেদিকে শীতকালে নানা ক্লাবের থেকে রক ক্লাইম্বিং প্রশিক্ষণে ছেলেমেয়েরা আসে। ওখানে চিমনি ক্লাইম্বিং, রোপ ফিক্স করে রিভার ক্রসিং এর অনুশীলনও চলে। তবে জানা না থাকলে বর্ষাকালে সেই সব জায়গা খুঁজে পাওয়া একটু কঠিন। পথ জানা থাকলে দ্বিতীয় চূড়া থেকে পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে ট্রেক করে শিলালিপির কাছে নামা যায়। সময় লাগে প্রায় ২ - ৩ ঘন্টা। শিলালিপির দিক থেকেও চড়াই পথে দ্বিতীয় চূড়ায় পৌছনো যায়। আমি কয়েকবার গিয়েছি। কিন্ত অভিজ্ঞ গাইড সাথে না থাকলে একা সে চেষ্টা না করাই উচিত, বিশেষ করে বর্ষাকালে। ঝর্ণার জল কীভাবে আসছে প্রশ্ন করেছিলে, উত্তরে জানাই, বর্ষায় পাহাড়ের ঢালে যে জল জমে তা শিলাস্তর ভেদ করে মাটির গভীরে (স্বাভাবিক জলস্তরে) পৌছতে পারে না। অনেকটা প্রাকৃতিক রিজার্ভারের মতই সেই জল জমা থাকে এবং শিলার মধ্যে ক্ষুদ্র ফাটল দিয়ে বেরিয়ে আসতে থাকে সারা বছর। শুধু শুশুনিয়া নয়, এমন অনেক পাহাড়েই দেখা যায়। বিহারীনাথ পাহাড়ের আম ঝর্ণাও একই ভাবে সৃষ্টি। অনেকটা আর্টিজিও কূপের মতো। শিলালিপির কাছেও একটা ঝর্ণা আছে, তবে সেটার জলধারা একটু কম। পাহাড়ের বিপদ সম্পর্কে বলে রাখা ভালো। পাহাড়ে অনেক হনুমান আছে। সঙ্গে খাবার আছে বুঝতে পারলে পিছু নিতে পারে। আর আছে সাপ। এবং তারা বিষধর। তাই ফুলপ্যান্ট এবং ভালো জুতো ছাড়া জঙ্গলের পথে চলা উচিত নয়। হাতে একটা লাঠি নিয়ে শুকনো পাতা বা ঝোপ-ঝাড়ে মধ্যে শব্দ করতে করতে এগোলে ভয় নেই। কম্পন অনুভব করলে ওরা পথ ছেড়ে দূরে সরে যায়। অনেক সাপ গাছেও থাকে। মূলত গিরগিটি খেতে গাছে ওঠে। তাই বিপদ ওপর থেকেও নামতে পারে। তবে দুষ্কৃতকারীর ভয় নেই। গ্রামের মানুষ খুবই ভালো। শীতকালটাই জঙ্গলে অ্যাডভেঞ্চার করার উপযুক্ত। সঙ্গে উপরি পাওনা ভোরে সদ্য গাছ থেকে পাড়া খেজুরের রস। পথ হারিয়ে যেখান থেকে তুমি প্রথম চূড়ার ওয়াচ টাওয়ার দেখেছিলে, তার কাছাকাছি ছিল রক ক্লাইম্বিং এর অঞ্চল। ওখান থেকে ডান দিকে এগোলে প্রথম চূড়ার দিকে যাওয়ার পথের নিচু অংশে পৌছনো যায়। বামদিকে এগোলে পথ নেই। পাহাড় খাড়া নেমে গেছে। সেদিক দিয়ে নামা যায় না। তবে কিছুটা নিচে একটা পায়ে চলা পথ বাম দিকে নেমে গেছে। সেদিকে কিছু লোক কাঠ কাটতে আসে। সেদিক দিয়ে নামলে খাদান অঞ্চল (আগে পাথর ভেঙে নিচে নিয়ে যেত, এখন নিষিদ্ধ)। সে পথ গন্ধেশ্বরী নদীর দিকে সমতলে মিশেছে (মুরুতবাহা ইকো রিসর্টের দিক)। কথিত আছে খাদানের দিকে কোথাও গুহার মধ্যে রাজা চন্দ্রবর্মার গুপ্তধন লুকোনো ছিল। ভূমিকম্পে তা পাহাড়ের বুকেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তবে এ কথার কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই। পাহাড়ের এদিক-ওদিক অনেক সুন্দর জায়গা আছে। এত শান্ত, এত নিরিবিলি ভাবা যায় না। শুধু পাখির ডাক আর বাতাসের আওয়াজ। আমি অনেক সময় দুটো শাল গাছের ডালে হ্যামক টাঙিয়ে শুয়ে থাকি।
@Travelwithtuhin0Ай бұрын
ভীষণ ভালো লাগলো আপনার অভিজ্ঞতা জেনে, অনেক ধন্যবাদ । 🙏💙