Рет қаралды 3,159
রিজিক নিয়ে হাফিজুর রহমান সিদ্দিকী আবেগঘন কণ্ঠে ওয়াজ | @_WazTV
রিজিক কখনো কখনো বান্দার জন্য পরীক্ষা। কারণ আল্লাহ দেখেন, যা তিনি মানুষকে অনুগ্রহ করে দান করলেন তা থেকে মানুষ কতটা তার পথে ব্যয় করে। যখন তিনি মানুষের আচরণে সন্তুষ্ট হন, যাকে ইচ্ছা তিনি আরো বাড়িয়ে দেন। আবার কারো কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন। তাই আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামত কেবল ভোগ করলে চলবে না, এর শুকরিয়াও আদায় করতে হবে। আল্লাহ আমাকে যেমন ভালো রাখলেন তেমনি আমার দায়িত্ব হলো- আল্লাহর এই ভালোবাসাকে মানুষের মাঝে পৌঁছে দেয়া। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও অভাবী মানুষগুলোর খবর নিয়ে তাদের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। সহিহ নিয়তের কারণে মানুষ যেমন আমার প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে তেমনি আল্লাহর অনুগ্রহ আমি লাভ করতে পারব।
জীবন তখনই সার্থক হবে যখন আল্লাহ প্রদত্ত সব হুকুম-আহকাম সঠিকভাবে মেনে চলব, কাজেকর্মে ও আচরণে যখন মুমিনের পরিচয় বহন করবে, আমার দ্বারা কোনো রকম নাফরমানিমূলক কাজ হবে না, এমতাবস্থায় আল্লাহর কাছে যা চাইব পূরণ করবেন। তবে একজন মানুষ যখন ঈমানের স্বাদ পায়, বাঁচার সার্থকতা উপলব্ধি করে, দুনিয়ার মোহ তার থেকে হারিয়ে যায়। কেবল আখিরাতের প্রয়োজনের জন্য সে দুনিয়াকে ব্যবহার করে। কিন্তু দুনিয়ামুখী হয়ে আখিরাতকে হারায় না।
অনেক মানুষ আছে যারা দুনিয়া নিয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়েছে। দুনিয়ার মোহে অন্ধ, আল্লাহর একত্ববাদ স্বীকার করে না, তারা আসলেই ক্ষতিগ্রস্ত। রিজিকের বিষয়ে হালাল-হারামের পরোয়া করে না। তবুও আল্লাহ এসব বান্দার রিজিক বন্ধ করে দেন না। তিনি তার রহমত তাদের ওপরও বর্ষণ করে চলেছেন। তাদের অবকাশ দিচ্ছেন। যেন তারা কঠিন বিচারের দিনে কোনো ওজর-আপত্তি প্রকাশ করতে না পারে।
একজন মানুষকে রিজিকের হালাল-হারামের বিষয়টি সবসময় গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হয়। আপনি যদি ঈমান এনে থাকেন, আপনার অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকে, আল্লাহ প্রদত্ত হালাল রুজির নির্দেশকে আপনি কোনোভাবেই অমান্য করতে পারবেন না। যদি এটি আপনি অমান্য করেন আপনি পরিপূর্ণ ঈমানদার নন। সে আপনি যত বড় বুজুুর্গ হোন না কেন। আপনার হারাম রিজিক আর ভণ্ড বুজুর্গিপনা আপনাকে জাহান্নামের দিকেই নিয়ে যাবে।
মানুষ তার রিজিকের ব্যাপারে বড়ই বিচলিত হয়ে যায়। নিজের কথা ভাবে, সন্তানের কথা ভাবে, এমনকি তার পরবর্তী প্রজন্মের কথাও। কিন্তু খুব কম মানুষই নিজের হালাল-হারামের কথা ভাবে। যদি সে আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রেখে রিজিকের সন্ধান করত তাহলে তার রিজিকের কোনো অভাব হতো না। যখন রিজিকের ব্যাপারে আমাদের সামনে কোনো পেরেশানি আসে আমরা ধৈর্যহারা হয়ে যায়। অথচ আপনি কি জানেন? যখন মানুষের উপার্জনের একটি পথ বন্ধ হয়ে যায় আল্লাহ তার জন্য উপার্জনের আরেকটি উত্তম রাস্তা বের করে দেন। এটাই রবের হিকমত। বান্দার প্রতি করুণা। তাই রিজিক নিয়ে অযথা পেরেশান হবেন না। বরং আল্লাহর শুকুরগুজারি বান্দা হতে চেষ্টা করুন। রিজিকের পথ এমনিতেই প্রশস্ত হয়ে যাবে।
বেশির ভাগ মানুষ পাপের দিকে পা বাড়ায় নিজে ভালোভাবে খেয়ে-পরে থাকার জন্য। অন্যকে ভালো রাখার জন্য। কিন্তু সে কি ভেবে দেখেছে, দুনিয়ার এই সময়টা কতটুকু? হয়তো সে সময় তার হয়নি। যদি হতো চিন্তায় পরিবর্তন আসত। কাজে স্বচ্ছতা ফিরে পেত। অথচ এক শ্রেণীর মানুষ এই চিরন্তন সত্যকে উপলব্ধি করে। প্রয়োজনে এরা আল্লাহর পথে শাহাদতবরণ করেছে বা স্বাভাবিকভাবে মৃত্যু হয়েছে তাদের। এই সব লোককে মহান আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন উত্তম রিজিক দান করবেন। ভেবে দেখুন, যার রিজিকের ফায়সালা আল্লাহর তরফ থেকে হয় সে কত সম্মানিত!
মানুষ অজ্ঞতাবশত নিজের রিজিক প্রশস্ত করার জন্য মানুষের কাছে ধরনা দেয়। যার রিজিক দেয়ার কোনো ক্ষমতা নেই, তার কাছেই রিজিক চায়। কী হাস্যকর! যে রিজিকের মালিক আল্লাহ তাকেই উপেক্ষা করছে। রিজিক চাইলে আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। তার ইবাদত করতে হবে। যদি আমরা আল্লাহর ইবাদত করি, তার নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করি, তিনি সন্তুষ্ট হয়ে আমাদের রিজিক অর্জনের পথগুলো আরো সহজ করে দেবেন। মানুষ তার রিজিক নিজেরা কাঁধে বহন করে ঘুরে বেড়ায় না, বরং আল্লাহ তায়ালা মানুষের রিজিক সরবরাহ করে থাকেন। রিজিকের ব্যাপারে যে আসমান থেকে সিদ্ধান্ত হয় সেই আসমানওয়ালা যদি মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করেন, তাহলে তার কীসের চিন্তা?
কখনো কখনো মানুষের মনে এমন প্রশ্নও জাগে, কাউকে আল্লাহ বেহিসাবে রিজিক দান করেছেন, আবার অনেককে খুব অল্প পরিমাণে রিজিক দান করেন। কেন এই তারতম্য, কী রহস্য এখানে? আল্লাহর চেয়ে বান্দার মনের খবর আর কেউ ভালো জানে না। তিনি প্রত্যেকের জন্য সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়ে থাকেন। যদি মানুষ এ কথার উপর ঈমান রাখে, তাহলে আল্লাহর কুদরতি কদমে তার মাথা নত হয়ে আসবে। সব বান্দাকে যদি আল্লাহ তায়ালা রিজিকের প্রাচুর্যতা দান করতেন, তাহলে তারা জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়াত। পরিমাণ মতো যার যতটুকু রিজিক প্রয়োজন তাকে ঠিক ততটুকুই তিনি দান করেন। যখনি কোনো বান্দার বাড়তি রিজিকের প্রয়োজন হয় আল্লাহ তার জন্য রিজিকের বন্দোবস্ত করে দেন।
যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে রিজিক অন্বেষণ করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। এমন সব ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা এরকম উৎস থেকে রিজিক দান করেন যে সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই নেই। এরপরও অনেক মানুষ আল্লাহর সাথে নাফরমানি করে। তার সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করে। তবুও তিনি নাখোশ হয়ে তাদের রিজিক বন্ধ করে দেন না। তিনি যদি তাদের রিজিক বন্ধ করে দেন, তাহলে দ্বিতীয় কোনো ইলাহ নেই, যে তাদের রিজিকের ব্যবস্থা করতে পারে।
@_WazTV