Рет қаралды 42
#hemantamukherjee #birthdaytribute
তাঁর কণ্ঠের জাদুতে মুগ্ধ হয়ে সলিল চৌধুরী বলেছিলেন, ‘ঈশ্বর নিজে গান গাইলে হয়তো ওঁর মতো গলা হত তাঁর।’ সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর বলেছিলেন, ওঁর গান শুনলে মনে হয়, যেন কোনও সন্ন্যাসী দেবস্থানে বসে মন্ত্রোচ্চারণ করছেন। সংগীত পরিচালক অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কণ্ঠকে বলতেন ‘দেব-কণ্ঠ’। সিনেমার গান হোক বা আধুনিক গান কিংবা রবীন্দ্রসংগীত - সর্বত্রই তিনি সমান সাবলীল। আপামর বাঙালির কাছে তিনিই সঙ্গীতের ‘স্বর্ণযুগ’, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। বলিউড যাঁকে চেনে হেমন্ত কুমার নামে। ধুতি, শার্ট আর সুরের এমন অপরূপ রসায়ন বাঙালি এর আগে তেমন দেখেনি। তাঁর গানের আবেদন চিরকালীন, যা শুধু বাঙালির নয়, আসমুদ্রহিমাচলের। আর এখানেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সার্থকতা।
১৯২০ সালের আজকের দিনে বারাণসীতে মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন হেমন্ত। তাঁদের আদি বাড়ি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বহুড়া। বাবা ভেবেছিলেন, ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে। ছেলে ভেবেছিল, সে হবে সাহিত্যিক। শুরুও করেছিলেন লেখালেখির চর্চা, কিন্তু মাঝপথে জীবনে জড়িয়ে গেল গান। এই গানের কারণেই হেমন্ত’র আর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া সম্পূর্ণ করা হল না। কালক্রমে গানই হয়ে উঠল তাঁর ধ্যান-জ্ঞান-নেশা এবং শেষমেশ পেশাও।
যদিও এর সূচনা মিত্র ইন্সস্টিটিউশনে পড়ার সময়েই। স্কুলে টিফিনের সময় তিনি বন্ধুদের গান গেয়ে শোনাতেন। তা শুনে স্কুলের সহপাঠী সুভাষ মুখোপাধ্যায় রেডিয়োর তবলা বাদক অসিতবরণের সাহায্যে অল ইন্ডিয়া রেডিয়োতে হেমন্তর অডিশনের ব্যবস্থা করেন। অডিশনের প্রায় তিন মাস পর তিনি রেডিয়োতে অনুষ্ঠান করার ডাক পান। ১৯৩৫ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিয়োতে জীবনের প্রথম গান রেকর্ড করেন তিনি, গানটি ছিল ‘আমার গানেতে এলে নবরূপে চিরন্তনী’ - লিখে দিয়েছিলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়। পরবর্তীকালে দু’জনেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে হয়ে উঠেছেন মহীরুহ, যদিও তাঁদের বন্ধুত্ব অটুট ছিল আজীবন। এই সময়েই তাঁর আলাপ শৈলেশ দত্তগুপ্তের সঙ্গে। তিনি তখন কলম্বিয়া ও এইচ-এম-ভি স্টুডিও-র বিখ্যাত সুরকার। তাঁর কাছেই প্রকৃত অর্থে গানে হাতেখড়ি হেমন্ত-র। ১৯৩৭-এর ডিসেম্বরে মুক্তি পায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রথম আধুনিক গানের রেকর্ড।
কয়েক বছর পর মেলে ছবিতে একক প্লে-ব্যাকের সুযোগ। ছবির নাম ‘নিমাই সন্ন্যাস’, মূল চরিত্রে ছবি বিশ্বাসের কণ্ঠে গাইলেন তিনি।
হেমেন গুপ্তের আমন্ত্রণেই বোম্বে যাত্রা করেন হেমন্ত। সেখানে ‘আনন্দ মঠ’ ছবির সংগীত পরিচালনা করেন তিনি। এরপর ‘নাগিন’, ‘সম্রাট’, ‘বন্দিশ’, ‘আনজান’ - একের পর এক ছবিতে তাঁর সুরে হিট গান। ‘নাগিন’ সিনেমার জন্য সেরা সুরকার হিসাবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও জেতেন।
আইপিটিএ পর্বে সলিল চৌধুরীর সঙ্গে জুটি বেঁধে তৈরি করেন ‘কোনো এক গাঁয়ের বধূ’, ‘অবাক পৃথিবী’, রানার’, ‘পাল্কীর গান’-এর মতো কালজয়ী সব সৃষ্টি। সংগীত পরিচালনা, সুর করা এবং গান গাওয়ার পাশাপাশি হেমন্ত মুখোপাধ্যায় চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেছেন। প্রথম প্রযোজনা মৃণাল সেন পরিচালিত ‘নীল আকাশের নীচে’। পরে হিন্দিতে করেন ‘বিশ সাল বাদ’ এবং অন্যান্য আরও কিছু চলচ্চিত্র।
চিরকাল বাম মনোভাবাপন্ন হেমন্ত ‘পদ্মশ্রী’ সম্মান নিতে অস্বীকার করেন। সারা জীবনে অসংখ্য সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন তিনি। ১৯৮৫ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি. লিট সম্মান প্রদান করে। জীবদ্দশায় মোট ১৪৭টি বাংলা চলচ্চিত্রে সুরারোপ করেছেন তিনি, গেয়েছেন অসংখ্য গান। তাঁর স্পষ্ট উচ্চারণ এবং রোম্যান্টিক গায়কি হেমন্ত-গানের স্বরলিপিকে চিরকালের জন্য গেঁথে দিয়েছে আমাদের মননে। আগামী পৃথিবীকে যা কান পেতে শুনতেই হবে।