Рет қаралды 22,170
কালকেতু ব্যাধের ছেলে, সুন্দর স্বাস্থ্যবান। বনের পশুরা তার জ্বালায় অস্থির হয়ে উঠল। তার বিয়ে হলো ১১ বছর বয়সে ফুল্লরার সঙ্গে। পৃথিবীতে তারা বেশ সুখে দিন কাটাতে লাগল। কালকেতু ছিল অসাধারণ শিকারি, তার নিক্ষিপ্ত শরে প্রতিদিন প্রাণ হারাতে লাগলো সংখ্যাহীন বনচর পশু। ছোট-খাটো দুর্বল পশুদের তো কথাই নেই, এমনকি বাঘ-সিংহরাও ভীত হয়ে উঠল। বনে পশুদের বাস করা হয়ে উঠল অসাধ্য। পশুরা ভাবতে লাগল কী করে রক্ষা পাওয়া যায় এ শিকারির শর থেকে। সব পশু একত্র হয়ে ধরল তাদের দেবী চণ্ডীকে; বলল, বাঁচাও কালকেতুর শর থেকে। চণ্ডী বলল, বেশ। শুরু হলো চণ্ডীর চক্রান্ত। কালকেতুকে অস্থির করে তুললো নানাভাবে। কালকেতু জীবিকা নির্বাহ করে পশু মেরে। একদিন সে বনে গিয়ে দেখলো বনে কোনো পশু নেই। চণ্ডী সে দিন ছল করে বনের পশুদের লুকিয়ে রেখেছিল। সে দিন কালকেতু কোনো শিকার পেল না, না খেয়ে তাকে দিন কাটাতে হলো। পর দিন আবার সে তীর-ধনুক নিয়ে শিকারে গেল। পথে দেখল সে একটি স্বর্ণগোধিকা অর্থাৎ গুইসাপ। এ জিনিসটি অলক্ষুণে; তাই কালকেতু চিন্তিত হয়ে উঠল। সে গোধিকাটিকে বেঁধে নিলো। মনে মনে ভাবল, আজ যদি কোনো শিকার না মেলে তবে এটিকেই খাওয়া যাবে।
সে দিন কোনো শিকার মিললো না তার। সে গোধিকাটিকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এসে দেখলো তার প্রতীক্ষায় বসে আছে ফুল্লরা। কিছু রান্না হয়নি। গতকাল তারা খেতে পায়নি, আজ খেতে পাবে না। কালকেতুর শিকারহীন ফিরে আসতে দেখে প্রায় কেঁদে ফেললো ফুল্লরা। কালকেতুকে বললো, ‘এ গোধিকাটিকে আজ রান্না করো, পাশের বাড়ির বিমলাদের থেকে কিছু খুদ এনে রাঁধ, আমি হাটে যাচ্ছি।’ এ বলে কালকেতু চলে গেল। তারপরেই এলো বিস্ময়, ঘটলো অভাবনীয় ঘটনা। গোধিকাটি আসলে ছিল দেবী চণ্ডী। ফুল্লরা বিমলাদের বাড়িতে যেতেই সে এক অপরূপ সুন্দরী যুবতীর রূপ ধারণ করল। বিমলাদের বাড়ি থেকে ফিরে এসে নিজের আঙ্গিনায় এক অপূর্ব সুন্দরী যুবতীকে দেখে অবাক হয়ে গেল ফুল্লরা। সঙ্গে সঙ্গে হলো ভীতও। ফুল্লরা তার পরিচয় জিজ্ঞেস করল। দেবী চণ্ডী ছলনাময়ী, শুরু করল তার ছলনা। সরলভাবে বললো, ‘কালকেতু আমাকে নিয়ে এসেছে।’ এ কথা শুনে ভয় পেল ফুল্লরা। এত দিন সে স্বামীকে নিয়ে সুখে ছিল, ভাবলো এবার বুঝি তার সুখের দিন ফুরোলো। ফুল্লরা অনেক বুঝালো যুবতীটিকে। বললো, ‘তুমি খুব ভালো, তুমি খুব সুন্দরী। তুমি তোমার নিজের বাড়িতে ফিরে যাও, নইলে মানুষ নানা কথা বলবে।’ কিন্তু যুবতী ফুল্লরার কথায় কোনো কান দিলো না; বললো, ‘আমি এখানে থাকব।’ এতে কেঁদে ফেললো ফুল্লরা, দৌড়ে চলে গেল হাটে কালকেতুর কাছে। বললো সব কথা। শুনে কালকেতুও অবাক। সে বাড়ি ফিরে এলো ফুল্লরার সঙ্গে, এবং যুবতীকে দেখে অবাক হলো। কালকেতু বারবার তাকে বললো, তুমি চলে যাও। কিন্তু কোনো কথা বলে না যুবতী। তাতে রেগে গেল কালকেতু, তীর-ধনুক জুড়লো, যুবতীকে সে হত্যা করবে। যখন কালকেতু তীর নিক্ষেপ করতে যাবে তখন ঘটলো আরও বিস্ময়কর এক ঘটনা। এবার দেবী চণ্ডী নিজের মূর্তিতে দেখা দিলো। সে আশ্চর্য সুন্দরী মেয়ে পরিণত হলো দেবী চণ্ডীতে। চোখের সামনে এমন অলৌকিক ব্যাপার দেখে ব্যাধ কালকেতু মুগ্ধ হয়ে গেল। চণ্ডী বললো, তোমরা আমার পুজো প্রচার কর, আমি তোমাদের অজস্র সম্পদ দেব, রাজ্য দেব। রাজি হলো কালকেতু-ফুল্লরা। অবশ্য দেবীর কথা প্রথমে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেনি ফুল্লরা, কেননা এ ছিল অভাবিত। দেবী সঙ্গে সঙ্গে সাত কলস ধন দান করল। কালকেতু জীবনে সোনা দেখেনি। সে সোনা লাভের পর সোনা ভাঙাতে যায় মুরারি শীল নামের এক বেণের কাছে। বেণে চতুর, কালকেতু বোকা। বেণে ভাবলো, দেখি না একটু বাজিয়ে যদি কালকেতুকে ঠকাতে পারি। তাই বেণে মুরারি শীল বলল, ‘সোনা রুপা নহে বাপা এ বেঙ্গো পিতল। ঘষিয়া মাজিয়ে বাপু করেছ উজ্জ্বল।।’ মুরারি বলছে, এ সোনা রুপো নয়, পেতল। তুমি ঘষেমেজে উজ্জ্বল করে এনেছো। কালকেতু বলল, এ আমি দেবীর কাছ থেকে পেয়েছি।
তখন বেণের টনক নড়ে। সে তো চিনেছে এ সোনার মতো সোনা হয় না। তাই বেণে শেষে সোনা রেখে দেয়। কালকেতু পরে গুজরাটে বন কেটে নির্মাণ করে বিরাট নগর। কালকেতু হয় গুজরাটের রাজা আর ফুল্লরা হয় রানী। সেখানে ছিল ভাড়ুদত্ত নামের এক দুষ্ট লোক। দুষ্টরা মন্ত্রী হতে চায় চিরকালই, সেও এসে কালকেতুর মন্ত্রী হতে চাইল। কালকেতু তাতে রাজি হলো না। এতে ভাড়ুদত্ত ক্ষেপে গেল। সে চলে গেল কলিঙ্গে, সেখানকার রাজাকে নানা কিছু বুঝিয়ে কালকেতুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে রাজি করাল। বেধে গেল যুদ্ধ। কালকেতু আগে ছিল ব্যাধ, এখন রাজা। সে যুদ্ধ জানে না। তাই যুদ্ধে হেরে গেল, এসে পালিয়ে রইল, বউয়ের পরামর্শ মতো, ধানের গোলার ভেতরে। কলিঙ্গরাজ তাকে বন্দি করে নিয়ে গেল, কারাগারে কালকেতু স্মরণ করল দেবী চণ্ডীকে। চণ্ডী কালকেতুর ওপর সব সময় সদয়, কেননা কালকেতু তার ভক্ত। দেবী কলিঙ্গের রাজাকে স্বপ্নে দেখা দিল। বলল, কালকেতু আমার ভক্ত, তাকে মুক্তি দাও, তার রাজ্য ফিরিয়ে দাও। কলিঙ্গরাজ দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে মুক্তি দিল কালকেতুকে, ফিরিয়ে দিল তার রাজ্য। কালকেতু তার রাজ্য ফিরে এসে আবার রাজা হলো, রাজত্ব করতে লাগলো বেশ সুখে। ফুল্লরা তার সুখী রানী। অনেক দিন রাজত্ব করে বৃদ্ধ হলো কালকেতু আর ফুল্লরা এবং এক শুভ দিনে মহাসমারোহে আবার নীলাম্বর-ছায়ারূপে ফিরে গেল স্বর্গে। কালকেতু-ফুল্লরার এ কাহিনীটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
#Kalketu_Upakkhan
#Bangla_Literature
#Department_of_Bangla
পর্ব বিভাজন (মোট পর্ব ৮২টি)
00:00 ভূমিকা
06:40 নিদয়ার গর্ভ (১নং পর্ব)
09:58 সাধ ভক্ষণ (২নং পর্ব)
14:00 কালকেতুর জন্ম (৩নং পর্ব)
21:14 কালকেতুর বাল্য ক্রিড়া (৪নং পর্ব)